আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ফের নিহত হয়েছেন একজন, আহত হয়েছেন আরো বহুসংখ্যক। সোমবার দেশটির প্রধান শহর ইয়াঙ্গুনে এই ঘটনা ঘটেছে।
থিয়া সোয়ে নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘তার (নিহত) বয়স ছিল ২০ বছর। তাকে মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।’
‘তারা (নিরাপত্তা বাহিনী) নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে। যে সড়কে বিক্ষোভকারীরা অবস্থান নিয়েছিল, সেখানকার সবকিছুতে তাদের গুলির চিহ্ন পাওয়া যাবে। সেখানে উপস্থিত রেডক্রস টিমের গাড়িকে লক্ষ্য করেও গুলি করা হয়েছে।’
দেশটির পুলিশ ও জান্তা সরকার যথারীতি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। মিয়ানমার রেডক্রসের সদর দফতর থেকে জানানো হয়েছে, রেডক্রস বিষয়টি পর্যালোচনা করছে।
মিয়ানমারের কারাবন্দিদের সহায়তা দানকারী বেসরকারী সংস্থা অ্যাডভোকেসি গ্রুপ অ্যাসিস্টান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারস (এএপিপি) ও স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে এ পর্যন্ত দেশটিতে সামরিক বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছেন ৪৬০ জন।
কিন্তু নিরাপত্তা বাহিনীর সহিংসতা দেশটির গণতন্ত্রপন্থি বিক্ষোভকারীদের পিছু হটাতে পারেনি। রাজধানী নেইপিদো, প্রধান শহর ইয়াঙ্গুন, মান্দালয়সহ বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভে প্রতিদিন যোগ দিচ্ছেন লাখ লাখ মানুষ।
সোমবার ইয়াঙ্গুনে যখন গুলি চলছে, তখনও দেশটির মধ্যাঞ্চলীয় শহর বাগো, মিনহ্লা, খাইন-উ, পিনলেবু, দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর মাওলামাইন, পূর্বাঞ্চলীয় শহর ডেমোসো এবং পূর্বাঞ্চলীয় শহর সিপাও এবং মাইতিতকানিয়ায় জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ চলছিল।
বিক্ষোভে দিকনির্দেশনা দিতে মিয়ানমারের আন্দোলনকারী জনতা ইতোমধ্যে জেনারেল স্ট্রাইক কমিটি অব ন্যাশনালিটিজ নামের একটি কমিটিও গঠন করেছে। কমিটির নেতারা ইতোমধ্যে দেশটির সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীগুলোর সশস্ত্র বিদ্রোহী দলগুলোকে চলমান বিক্ষোভে একাত্মতা ঘোষণা করার আহ্বান জানিয়েছেন।
কমিটির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে রয়টার্সকে বলেন, ‘একটি সত্যিকার গণতান্ত্রিক মিয়ানমার প্রতিষ্ঠা করতে হলে সবার অংশগ্রহণ প্রয়োজন। এ কারণেই চলমান বিক্ষোভে তাদের যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।’
২০২০ সালের নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলে নেওয়ার পর থেকে দেশটির লাখ লাখ মানুষ সেনাশাসনের অবসানের দাবিতে বিক্ষোভ করে আসছেন। গৃহবন্দি নেত্রী অং সান সু চির মুক্তি এবং নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি করছেন তারা।
বিক্ষোভের প্রথম পর্যায়ে সামরিক বাহিনী দৃশ্যত সংযমের পরিচয় দিলেও গতমাসের শেষদিক থেকে ক্রমশ অসহিষ্ণু হয়ে উঠতে থাকে। আন্দোলন দমনে রাবার বুলেট-জলকামান-টিয়ারশেলের পরিবর্তে প্রাণঘাতী স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবহার করা শুরু করেন মিয়ানমারের আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।
তারপর থেকে প্রতিদিনই নিহতের ঘটনা ঘটছে মিয়ানমারে। গত শনিবার ছিল দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর দিবস। সেদিন মিয়ানমারে নিহত হন ১৬৪ জন। অভ্যুত্থানের পর থেকে একদিনে সর্বোচ্চ নিহতের সংখ্যা এটি।
১ ফেব্রয়ারি অভ্যুত্থানের পর বন্দি করা হয় মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চিকে। বর্তমানে তিনি কারা অন্তরীণ আছেন। এছাড়া তার দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসির পার্লামেন্ট সদস্যসহ দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় ৩ হাজার সদস্যকে আটক করেছে দেশটির সেনাবাহিনী।
মিয়ানমার সেনাবাহিনী গঠন করেছিলেন অং সান সু চির বাবা জেনারেল অং সান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪৫ সালে মিয়ানমারে জাপানের আধিপত্য রুখতে সেনা বাহিনী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি, যা আঞ্চলিকভাবে পরিচিতি পায় ‘তাতমাদৌ’ নামে।
দু’বছর পর ১৯৪৭ সালে সেই সেনাবাহিনীর সদস্যদের হাতেই গুপ্তহত্যার শিকার হন জেনারেল অং সান।
সূত্র: রয়টার্স